স্থায়ীভাবে এলার্জি দূর করার উপায় জেনে নিন


এলার্জি দূর করার উপায়

এলার্জি কি?

আমরা অনেকেই কমবেশি জানি অ্যালার্জি কাকে বলে। খুব কম লোকই আছে যারা জীবনে কখনো অ্যালার্জি অনুভব করেনি। আমাদের শরীরের একটি ইমিউন সিস্টেম রয়েছে, যার কাজ হল বহিরাগত ক্ষতিকারক পদার্থকে শরীরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখা।

কিন্তু যখন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন কিছু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তখন আমাদের মধ্যে যে শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয় তাকে অ্যালার্জি বলে।

অ্যালার্জির উপসর্গ

অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণগুলি হল নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা, কফ, চুলকানি চোখ এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, ত্বকে কালো দাগ। যারা মৌসুমি অ্যালার্জিতে ভুগছেন তারা সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। তবে, আপনি যদি অ্যালার্জির লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন বা অ্যালার্জিতে ভুগছেন তবে এই পোস্টটি আপনাকে চিরতরে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায়, ওষুধ এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিশদ দেবে।[এলার্জি দূর করার উপায়]

এলার্জি প্রতিক্রিয়া লক্ষণ কি কি?

অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলি হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি যদি প্রথমবার অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসেন তবে আপনার লক্ষণগুলি হালকা হতে পারে। আপনি যদি বারবার অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসেন তবে এই লক্ষণগুলি আরও খারাপ হতে পারে। হালকা অ্যালার্জি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে:

  • আমবাত (ত্বকের উপর চুলকানি লাল দাগ)
  • চুলকানি, রাইনাইটিস, ফুসকুড়ি
  • গলা চুলকায়, জলযুক্ত চোখের চুলকানি।

গুরুতর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে:

অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই তীব্র এবং আকস্মিক অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া অ্যানাফিল্যাক্সিস নামে পরিচিত এবং শ্বাসনালী ফুলে যাওয়া, শ্বাস নিতে অক্ষমতা এবং রক্তচাপের হঠাৎ এবং গুরুতর বৃদ্ধি সহ জীবন-হুমকির লক্ষণ ও হতে পারে। যদি কেউ এই ধরনের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

  • পেট ফাঁপা বা ব্যথা, বুকে ব্যথা বা শক্ত হওয়া।
  • ডায়রিয়া
  • গিলতে অসুবিধা
  • শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ত্বকে ফোসকা পড়া চামড়া ঝরে যাওয়া।
  • মাথা ঘোরা, ভয় বা উদ্বেগের অনুভূতি
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • শুকনো কাশি, হাঁচি, নাক-গলায় চুলকানি এবং নাক বন্ধ হওয়া
  • মুখ, চোখ বা জিহ্বা ফুলে যাওয়া
  • দুর্বলতা
  • শ্বাস নিতে অসুবিধা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

এলার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণ কি ?

অ্যালার্জি যে কোনও বয়সে বিকাশ করতে পারে এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার বেশিরভাগ কারণ অজানা আমাদের কাছে। অ্যালার্জির বিকাশের পরিচিত কারণগুলির মধ্যে একটি হল জেনেটিক্স। অর্থাৎ এই ধরনের অ্যালার্জি পারিবারিক ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে।

যদি পিতামাতার কারোরই অ্যালার্জি না থেকে থাকে, তবে শিশুর অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় 15% থাকে। যদি পিতা-মাতার উভয়েরই অ্যালার্জি থাকে, তবে সন্তানের অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি 30% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং যদি উভয় পিতামাতার অ্যালার্জি থাকে, তবে ঝুঁকি 60%-এর বেশি বেড়ে যায়। যদিও অ্যালার্জির বেশিরভাগ কারণ অজানা, কিছু কিছু পদার্থ রয়েছে যা সাধারণত অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

  • মৌমাছির কামড় বা অন্যান্য পোকার মাকড়রের কামড়।
  • গরুর মাংস, চিংড়ি, মাছ, কিছু সবজি যেমন বেগুন এবং এসব জাতীয় খাবার।
  • নির্দিষ্ট কিছু খাবার
  • গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া
  • পেনিসিলিন বা অ্যাসপিরিনের মতো কিছু ওষুধ আছে যেগুলোর প্রতি অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে
  • বিভিন্ন ওষুধ
  • নির্দিষ্ট গাছপালা এবং পরাগ।
  • হাঁচি, সর্দি, চুলকানি, ফুসকুড়ি, ফোলা, হাঁপানি

অ্যালার্জি চিকিৎসা

অ্যালার্জি কেন হয়েছে তা জানতে পারলে এগুলো এড়িয়ে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খেলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অ্যালার্জেন এড়িয়ে এবং ওষুধের সাথে ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে অ্যালার্জি সহজেই নিরাময় করা যায়। এটি অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি দীর্ঘমেয়াদী উপায়।

অনেকে মনে করেন অ্যালার্জি পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে আগেভাগেই ধরা পড়লে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায়। তবে অবহেলা করলে রোগটি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে উঠলে পুরোপুরি সেরে উঠতে অনেক সময় লাগে। [এলার্জি দূর করার উপায়]

এলার্জি থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায়

অ্যালার্জির ব্যাথা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। অনেকেই অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে নানাভাবে চেষ্টা করে থাকেন। অ্যালার্জির ভয়ে সামনে ভালো খাবার খেতে পারেন না। কিন্তু এমন একটি উপায় আছে যা অনুসরণ করলে সারাজীবনের জন্য সহজেই অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

  • প্রথমে এক কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন।
  • শুকনো পাতা গুঁড়ো করে একটি পরিষ্কার পাত্রে রাখুন।
  • ১/৩ চা চামচ নিম পাতার গুঁড়া এক গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন।
  • আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন।
  • এটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে খান।

এভাবে একটানা 21 দিন খাবেন। কাজ শুরু করতে এক মাস সময় লাগতে পারে। এই পদ্ধতি মেনে চললে অ্যালার্জি থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন আশাকরি।

আরোও জানুনঃ যে কারণে খাবারের প্রতি আপনার এলার্জি বাড়তে পারে 

অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে করণীয়

ঘর পরিষ্কার করার সময় বিভিন্ন জিনিসের ঘরের চিপে কিছু ময়লা জমে যায়। জমে থাকা ময়লা অ্যালার্জির কারণ হয় থাকে। তাই বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ইত্যাদি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে সবসময়। তা ছাড়া বাড়ির চারপাশ ভালোভাবে পানি ও ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। তাছাড়া কম্বল- প্রতিদিন রোদে শুকানো ভালো করে। কারণ ঘরের ডাস্ট মাইট সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মিতে মারা যায়।

তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে দরজা-জানালা ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করার পাশাপাশি দরজা-জানালার পর্দাও ধুয়ে ফেলতে হবে। বাথরুমের জানালা খোলা রাখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে এবং বাথরুম যেন ভেজা না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

এই ছাড়া রান্নাঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুদের খেলনা, জুতা, জামাকাপড় ইত্যাদিও পরিষ্কার রাখতে হবে কারণ সেগুলোতে ধুলো জমে অ্যালার্জি হতে পারে। বাড়িতে পশু থাকলে তাদেরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এটি করলে সহজেই অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এলার্জি দূর করার উপায়

অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা

প্রত্যেক ব্যক্তির বিভিন্ন জিনিস বা খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই কি ধরনের সংস্পর্শে এলে বা খাওয়ার সময় কি খাবার খেলে অ্যালার্জির লক্ষণগুলি ফোটে উঠে তা মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। একবার আপনি এটি বের করে ফেললে, অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়। সাধারণ খাবারের অ্যালার্জির মধ্যে রয়েছে যেমন-

  • চিংড়ি মাছ
  • গরুর মাংস
  • ইলিশ মাছ
  • বেগুন
  • হাঁসের ডিম
  • বাদাম
  • তাছাড়া বাচ্চাদের ডিম ও দুধে অ্যালার্জি হতে পারে।

এইসব ছাড়া লাল ও শাক খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। যেমন: গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো- এ ধরনের রঙিন সবজিতে অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। তাই কোন খাবারে অ্যালার্জির সমস্যা হচ্ছে তা ব্যক্তিকে জেনে নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। [এলার্জি দূর করার উপায়]

আরোও জানুনঃ জরায়ু ক্যান্সার লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয় কি বিস্তারিত 

এলার্জি পরীক্ষাসমূহ

ত্বক পরীক্ষা: অ্যালার্জেন এমন পদার্থ যা থেকে অ্যালার্জি হয়। একটি ত্বক পরীক্ষায় উপরের বাহুতে অ্যালার্জেন ধারণকারী অল্প পরিমাণ তরল রাখা জড়িত। তারপর সেই জায়গায় সুই দিয়ে একটা ছোট ছিদ্র করা হয়। যদি অ্যালার্জি হয়, 15 মিনিটের মধ্যে জায়গাটি চুলকাতে শুরু করে এবং লাল হয়ে যায়।

রক্ত পরীক্ষা: একটি নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য এই পরীক্ষাটি রক্তের নমুনা নেয়।

প্যাচ পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় ‘কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস’ নামে এক ধরনের একজিমা বা অ্যালার্জিজনিত চর্মরোগের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়।

চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা: এই পরীক্ষা কয়েকটি ক্ষেত্রে করা হয়। পরীক্ষাটি এমন জায়গায় করা উচিত যেখানে গুরুতর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে জরুরি চিকিৎসা সম্ভব। এই পরীক্ষায় কোনো নির্দিষ্ট খাবারে অ্যালার্জি থাকলে রোগীকে সেই খাবার খাওয়ালে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ বাড়ালে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বাড়ে কি না তাও দেখা হয়।

নাকের এলার্জি দূর করার উপায়

অ্যালার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল কারণ চিহ্নিত করা এবং এটি এড়ানো। রোগীকে প্রথমে বুঝতে হবে তার অ্যালার্জির সমস্যার কারণ কী। এলার্জি চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল স্বাস্থ্য শিক্ষা। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের শীতের ধুলাবালি এবং কালো গাড়ি ধোয়া থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসা

তবে অ্যালার্জির কারণ এড়িয়ে চলাই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। এই রোগের প্রধান ওষুধ হল অ্যান্টি-হিস্টামিন, স্টেরয়েড-সদৃশ নাকের স্প্রে। এছাড়াও, মন্টেলুকাস্ট ট্যাবলেটগুলি বিভিন্ন বয়সের জন্য খুব কার্যকর।
যাইহোক, কোন ঔষধ ব্যবহার করার আগে, আপনাকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

আরোও জানুনঃ ফুসফুস ক্যান্সার লক্ষণ এবং প্রতিরোধ করার উপায় 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url