অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালে আছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। তার পাশাপাশি এতে আছে ভিটামিন-ই আর এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অর্জুন গাছ দেখতে পেয়ারা গাছের মতো অনুরুপ  পাতা রয়েছে কিন্তু এটি আকারে অনেক বড়।  অর্জুন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল টার্মিমিনেলিয়া অর্জুন। বিভিন্ন অঞ্চলে এটা কুকুভ, ধাওয়াল ও নাদিসারজ নামে পরিচিত।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালে আছে অনেক খনিজ উপাদান। অর্জুন গাছ প্রধান ওষুধি গাছের মধ্যে একটি অন্যতম গাছ। প্রাচীনকাল থেকে এটি হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্জুন গাছের ছাল পাউডার ডিকোশন স্কুর হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তাই আমাদের অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অ্যাজমা রোগের ওষুধ: অজুন গাছের ছাল অ্যাজমা রোগ অপসারণের জন্য অনেক উপকারে আসে। অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো করে আপনি যদি দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন নিয়মিত তাহলে অ্যাজমার সমস্যা দূর হয়ে যাবে অনেকটা।

হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে: অর্জুন গাছের ছালকে হৃদরোগের মহৌষধ বলা হয়। অর্জুন গাছের ছাল কিন্তু হার্টের সমস্যা খুব ভালো কাজ করে। এটি কার্ডিয়াক মার্শাল শক্তিশালী করে। হার্টের মধ্যে রক্ত চলাচল বাড়ায় করোনারি হার্ট রোগ হতে বিরত রাখে। অর্জুন গাছের ছাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে বেটে দুধে মিশিয়ে খান। ছাল গুড়ো করে দুধে মিশিয়ে খেলে হবে।

কাশির উপশম: অর্জুন গাছের শুক্রানু ছালের পাউডার তাজা কচি পাতার রস একসাথে মিশিয়ে শুকিয়ে নিন। এভাবে সাত বার মিশানোর পর অবশিষ্ট যা থাকে তা দিয়ে চূর্ণ তৈরি করা হয়। তার সাথে রোগীকে মধু সেবন রোগী কিছুটা আরাম অনুভব করে।

উন্নত চুলের জন্য: চুলের বৃদ্ধি করার জন্য আমরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারি। অর্জুন গাছের ছাল হেনার মাথার চুলে লাগানোর ফলে সাদা চুল কালো হয়ে যায়। এই সাথে চুলের গোড়া শক্তিশালী করে চুলকে করে মজবুত।

ত্বকের পরিচর্যা: অর্জুন গাছের ছালের প্রভাবে অনেক ত্বকের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি ভিতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ত্বকের কোষ মজবুত করে। অর্জুন গাছের ছাল, বাদাম, হলুদ এবং কর্পূর সমান পরিমাণ মিশিয়ে পেস্ট করে ত্বকের উপর প্রয়োগ করলে মুখের সমস্ত কালো দাগ দূর হয় এবং মুখের ত্বকে করবে উজ্জ্বল।

প্রসাবের বাধা দূর করে: অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তৈরি পানীয় রস প্রস্রাবের বাধা দূর করে। সেই জন্য অর্জুন গাছের ছাল পেস্ট করে এবং দুই কাপ পানিতে ফোটান। যখন পানি অর্ধেক হয়ে আসবে তখন তা ঠান্ডা করে নিন। এরপর ঠান্ডা হওয়ার পর রোগীকে তা পান করান। দিনে একবার খাওয়ানোর ফলে প্রসাবের বাধা দূর করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়: অর্জুন গাছের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত। অজুন গাছের বাকল, লিপিড ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অর্জুন গাছের ছাল সেবনের ফলে রক্ত প্রবাহ বাধা দূর করে। তার জন্য অর্জুন গাছের ছালের এক চামচ পাউডার দুই গ্লাস পানির সাথে পানির সাথে মিশিয়ে ফুটানো পানি অর্ধেক হয়ে গেলে। কালসন্ধ্যা সে পানি সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা প্রাণ করা উচিত। এভাবে প্রাণ করলে বন্ধ ধমনী খুলবে এবং কোলেস্টরলের মাত্রা হ্রাস পাবে। তাহলে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমে যাবে।

মেদ দূর করে: অতিরিক্ত মেদ নিয়ে  সমস্যায় ভুগে অনেক মানুষ বিরক্ত বোধ করছে। সন্ধ্যায় অর্জুন গাছের ছালের মিশ্রণ পান করলে তাদের সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে অনেকটা। এটা এত দ্রুত কাজ করে যে মাত্র এক মাসের মধ্যে আপনি আপনার মেদের উপর প্রভাব অনুভব করতে পারবেন।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

বুক ধড়ফড় করলে: আমাদের অনেক সময় দূর থেকে হেঁটে আসলে বা খুব দুরছিনতাই পড়ে গেলে পড়ে গেলে আমাদের বুক ধড়ফড় হয় । অর্জুন গাছের ছাল সেই সময় আমাদের অনেক সাহায্য করতে পারে। অর্জুন গাছের ছাল শুকিয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে রোজ বিকেল খান। একটু ঠান্ডা করে খেতে হবে। এতে করে আপনার সমস্যা দূর হবে।

লিভারের সমস্যা দূর হয়: লিভার ভালো থাকা আমাদের শরীরের জন্য খুব দরকার। ডাক্তাররা বলেন লিভার টিক থাকলে অনেক সময় অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করে না। লিভার সুস্থ রাখতে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করুন। অর্জুন গাছের ছালের গুঁড়ো করে ভিজিয়ে রাখতে হবে পরের দিন সেই জল খেতে হবে এটি লিভার সিরোসিসের টনিক হিসেবে কাজ করে।

আমাশয় মুক্তি দেয়: আমাশয় হলে আমাদের জন্য খুব কষ্টকর। পেট সব সময় ভার হয়ে থাকে। তলপেটে নাভীর কাছে যন্ত্রণা করে কিছুই খেতে ইচ্ছে হয় না।  আমাশয় হলে আপনি অর্জুন গাছের ছালের রস সাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে খান এতে করে আপনার আমাশয়ের সমস্যা দূর হবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: গবেষণায় দেখা গেছে অর্জুন গাছের ছাল আছে  গ্যালিক অ্যাসিড আর লুটেনোনিন। এই দুটি উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমায়। এই ছাল ব্যবহার করলে আপনি ক্যান্সার থেকে কিছুটা দূরে থাকতে পারবেন।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়: আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যাদের হজম ক্ষমতা বা হজম শক্তি খুবই কম। আর এই জন্যই তাদের ডায়রি ও অন্যান্য পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা প্রতিদিন 30 থেকে 40 গ্রাম ওজন ওজন অর্জুন গাছের ছাল হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ক্ষত বা ঘা ভালো করে: আমাদের শরীরে কোথায় ক্ষত বা ঘা হলে দেখা দিলে। যদি আমরাই ক্ষতস্থান অর্জুন গাছের ছালের রস ব্যবহার করতে পারি তাহলে খুব তাড়াতাড়ি তা সেরে যাবে।

মুখের ফোস্কার চিকিৎসা: মুখের ফোস্কার কারণে বিরক্ত ব্যক্তিরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারেন। তার জন্য নারিকেল তেলের সাথে অর্জুন গাছের ছালের চূর্ণ যোগ করে তা আপনার মুখের ফোস্কার উপর প্রলেপ আকারে লাগালে আপনি কষ্ট থেকে অবশ্যই রেহাই পাবেন। শুধু তাই নয় এই মিশ্রণটি অল্প গুড় সহযোগে সেবন করলে জ্বরের সমস্যা থেকে ত্রাণ পাওয়া যায়।

কানের ব্যথা ভাল করে: যাদের কানের ব্যথা রয়েছে তারা যদি কানের মধ্যে অর্জুন গাছের পাতার রস 2 ফোঁটা করে অর্জুন গাছের পাতার রস দেয় তাহলে তাদের কানের ব্যথা সেরে যাবে।

যৌন সমস্যা দূর করে: যাদের মধ্যে যৌন সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন এক কাম দুধের সাথে ৪ থেকে ৫ গ্রাম অর্জুন গাছের ছাল মিশিয়ে খায় তাহলে তাদের যৌন সমস্যা সমস্যা দূর হয়ে যাবে। যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা


>আরও পড়ুন-  অজুন গাছ হার্ট এবং লিভারের সমস্যা মেটাতে দারুন কাজ করে। 

অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা

পূর্বে আমরা অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে ধারনা দিয়েছি। এখন আমরা অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা সম্পর্কে জানব। যেকোনো বিষয়ের উপকারিতা জানার পাশাপাশি অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ হয়তো আপনার কোন সমস্যা রয়েছে। যার কারণে সাইডএফেক্ট করতে পারে। যার কারণে আপনি উপকারী গাছটি ব্যবহার করতে পারবেন না।

  • গর্ভবতী মহিলাদের অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অর্জুন গাছের ছাল গর্ভবতী মহিলাদের ঝুকি বাড়িয়ে তোলে। সেই জন্য তাদের এই ছাল ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
  • সুগার রোগীদের জন্য অর্জুন গাছের ছাল যথেষ্ট সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। কারণ অর্জুন গাছের ছাল সুগার রোগীদের সোগার আরো বাড়িয়ে তোলে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শের পরে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করুন।

আরও পড়ুন- কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়

অর্জুন গাছ কোথায় পাওয়া যায়।

অর্জুন গাছ প্রায় অনেক দেশে জন্মায় তাদের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা এর আদি নিবাস। বাংলাদেশের পায় বিভিন্ন অঞ্চলে অর্জুন গাছ জন্মায়। বিশেষ করে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে অনেক বেশি দেখা যায়। দোআঁশ মাটিতে সাধারণত ভালো হতে দেখা যায়।  তবে এই নাতিশীতোষ আবহাওয়া বা বনাঞ্চলে অঞ্চলে এই গাছ বেশি জন্মায়।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের বাণিজ্যিক মূল্যয়ন

অজুন গাছের উপকারিতা ও ভেষজ গুনাগুন যতটা বেশি তেমনি এর বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেশি। অজুন গাছের কাঠ দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করা যায়। আই এর চাহিদা অনেক বেশি। প্রাচীনকাল  থেকে অর্জুন গাছের কাঠ দিয়ে যে সকল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হতো তা হল জলযান, নৌকার দাঁড়, গৃহ নির্মাণ কাজে, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হতো।

অর্জুন গাছের অর্থ

অর্জুনকে অন্যভাবে Tarminalia Arjun  বলে।

সম্পর্কিত শব্দ: অর্ক অর্কপত্র  অর্কবৃক্ষ, অর্গল অর্ঘ্য।

উপসংহার

অর্জুন গাছের ছাল প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ঔষধি হিসেবে রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আপনার বেশি করে কি গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারবেন। আপনারা যদি নিয়ম অনুযায়ী অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার এই গাছের ছাল থেকে অনেক উপকৃত হবে।

>আরও পড়ুন- মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url