দ্রুত চুল ঘন ও লম্বা করার সহজ উপায় জানুন ২০২৩
চুল ঘন ও লম্বা করার সহজ উপায়: চুল দ্রুত লম্বা হয় না! বর্তমান অনেকেরই এমন অভিযোগ। অবশ্যই, এত দূষণ, চাপ এবং পুষ্টির অভাবের আধুনিক জীবনে এটি স্বাভাবিক। আমরা সবাই জানি চুল সুন্দর রাখতে হলে ভালো ঘুম, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে, চুল পরিষ্কার রাখতে হবে ইত্যাদি।কিন্তু চুল লম্বা করতে কী করতে হবে? হ্যাঁ, আপনি কিছু বিশেষ কৌশলের মাধ্যমে আপনার চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারেন। দ্রুততম উপায়ে চুল গজানোর ফুলপ্রুফ কৌশলটি শিখুন।
চুলকে নিঃশ্বাস নিতে দিন
সবসময় চুল টাইট পনিটেিইল করা থেকে এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার চুলকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও ভেজা চুল বাঁধা এড়িয়ে চলুন। এটি চুলকে খুব দ্রুত মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশনের জন্য সংবেদনশীল করে তোলে। রোদে বের হলে চুল ঢেকে রাখুন। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি খুব সহজেই চুলের ক্ষতি করে।
নিয়মিত মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন
দাদী নানীরা বলতেন তেল ব্যবহার করলে চুল লম্বা হয়? আসলে তেল দিয়ে চুল লম্বা হয় না, তেল লাগানোর সময় মাথায় ম্যাসাজ করলে চুল লম্বা হয়। চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে চুলের ফলিকলগুলি উদ্দীপিত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
সপ্তাহে অন্তত দুবার চুলের গোড়ায় ভালো করে তেল মালিশ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। বাড়তি সুবিধা হিসাবে, তেলের কারণে চুলের ডিপ কন্ডিশনিং এর কাজটা হয়ে যাবে। আপনি যদি আপনার চুলে তেল দিতে না চান তবে আপনি আপনার আঙ্গুল দিয়ে আপনার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করতে পারেন। অথবা আপনি আপনার চুল শ্যাম্পু করার সময় ম্যাসাজ সম্পূর্ণ করতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। চুলের যত্নে অ্যালোভেরা, মেহেদি, আমলকি, শিকাকাই, আপেল সিডার ভিনেগার এবং নারকেলের দুধ অতুলনীয়। এগুলো মাথার ত্বকে যেমন পুষ্টি জোগায়, তেমনি চুল পড়া রোধ করে। এটি দ্রুত চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
চুল ঘন ও লম্বা করার সহজ উপায়
মেয়েরা চুল নিয়ে বেশি চিন্তিত। আপনি এমন মেয়েরাও পাবেন যারা চুল ঘন করতে বাজারের যেকোনো পণ্য ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিছু দরকারী হতে পারে এবং কিছু দরকারী নাও হতে পারে। যা ক্ষতিকর বিপরীত।তাহলে চলুন আজ জেনে নেই কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তা না করে চুল ঘন করার দুটি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে। সপ্তাহে মাত্র ২/৩ দিন নিচের দুটি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করে ঘন, কালো ও ঝলমলে চুল পেতে পারেন।
ডিম ও অলিভ অয়েল: প্রাচীনকাল থেকেই চুলের বৃদ্ধির জন্য ডিম ব্যবহার হয়ে আসছে। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা চুল পড়া রোধ করে। এছাড়াও ডিমে রয়েছে সালফার, জিঙ্ক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস এবং আয়োডিন যা নতুন চুল গজাতে এবং চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।
তৈরি পদ্ধতি: একটি পাত্রে একটি ডিমের সাদা অংশ নিন। 1 চা চামচ অলিভ অয়েল (জলপাই তৈল) এবং 1 চা চামচ মধু নিন (চুলের দৈর্ঘ্য এবং পরিমাণ অনুযায়ী অলিভ অয়েল এবং মধুর পরিমাণ বাড়াতে পারেন)। তারপর উপাদানগুলো খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এটি একটি মসৃণ পেস্টর আকার ধারণ করবে তখন এটি ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে। এটি একটি মসৃণ পেস্ট হয়ে গেলে, মিশ্রণটি মাথার ত্বকে আলতোভাবে ঘষুন। 20 মিনিট পরে, প্রথমে আপনার চুল ঠান্ডা জল এবং তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। ভালো ফল পাবেন।
সরিষার তেল এবং মেহেদি পাতা: সরিষার তেল সাধারণত চুলে ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু চুলের গোড়া মজবুত করতে সরিষার তেল একটি বিশেষ কার্যকরী উপাদান, যা চুল পড়া পুরোপুরি রোধ করবে। এ ছাড়া মেহেদি পাতা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ফলে চুলের ঘনত্ব কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তৈরি পদ্ধতি: ২০০ গ্রাম সরিষার তেল একটি পাত্রে নিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। এবার এতে ১ কাপ পরিমাণ মেহেদী তাজা পাতা দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। যখন দেখবেন মেহেদী পাতা পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে তখন তা চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করে নিন। একটি এয়ার টাইট বোতলে এই তেল সংরক্ষণ করুন। এই তেল সপ্তাহে ৩ দিন চুলে লাগান। সব চাইতে ভালো ফল পাবেন সারারাত চুলে তেল লাগিয়ে রেখে সকালে সাধারণভাবে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেললে।
মেথি: পাতলা চুল ঘন করতে মেথির ব্যবহার অপরিহার্য। মেথি দানা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, পরের দিন ভেজানো মেথি বীজ ছেঁকে নিন, আধা কাপ পরিষ্কার পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। পেস্টটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করার আগে আপনি নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। চুলের যত্ন নিতে সপ্তাহে একবার মেহেদি লাগাতে পারেন। মেহেন্দি ভিতর থেকে মজবুত করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজের রস: পেঁয়াজের রস চুলের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। এতে থাকা পুষ্টিগুণ চুলকে ঘন ও লম্বা করতে সাহায্য করে। নারকেল তেল, লেবুর রস এবং পেঁয়াজের রস একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা মাথার ত্বকের মৃত কোষ মেরামত করে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। অ্যালোভেরা জেলের একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন এবং এটি মাথার ত্বকে ভাল করে ঘষে লাগিয়ে নিন। প্রায় 10-15 মিনিট অপেক্ষা করার পর, স্বাভাবিক ঠান্ডা জল দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেহেদি পাতা: মেহেদির ছোঁয়া দিয়ে পাতলা চুল ঘন করা যায়। ২ মুঠো তাজা মেহেদি পাতা নিয়ে তাতে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। 30-35 মিনিট অপেক্ষা করার পর, শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
>আরও পড়ুন- ঘন লম্বা চুল পছন্দ! জেনে নিন ঘন লম্বা চুলের সহজ উপায়
বালিশের কভার পরিবর্তন করুন
আপনি যদি আপনার চুল দ্রুত বাড়তে চান তবে আজই আপনার বালিশের কভার পরিবর্তন করুন। সুতির কভারের পরিবর্তে সিল্ক, সাটিন কাপড়ের কভার ব্যবহার করুন। সিল্ক কাপড় সুতির কাপড়ের চেয়ে নরম। সুতির কভারে চুল বেশি ঘর্ষণ করে, যা চুলের গোড়াকে নরম করে এবং চুল পড়া বাড়ায়। সিল্কের কাপড়ের ক্ষেত্রে এটা হয় না।
>আরও পড়ুন- মাথার চুল ঘন করার উপায় জেনে নিন
চুলের গ্রোথ ভালো না হওয়ার কারণ
কিছু কারণ রয়েছে যার কারণে চুলের গ্রোথ ভালো হয় না, চুলও বেশি লম্বা হয় না। এক নজরে সে কারণগুলো আমরা দেখিনি
- বংশগত কারণ
- বয়স্ক অতিরিক্ত স্টেস
- হরমোনাল পরিবর্তন
- থাইরয়েডের সমস্যা
- পুষ্টিহীনতা
- অতিরিক্ত কেমিক্যাল পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি
চুলের টিপস
- অপ্রয়োজনীয়ভাবে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার বন্ধ করুন, হিট লাগানোর আগে হিট প্রাটেক্টর অ্যাপ্লাই করুন।
- তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মোচড়ানো এড়িয়ে চলুন।
- আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বায়োটিন এবং ভিটামিন এইচ সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। দুধ, ডিম, পনির, বাদাম, মাছ, বাঁধাকপি এবং অ্যাভোকাডো নিয়মিত খান।
- কঠোর রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
শ্যাম্পু করার সময় যে ভুল করবেন না
শ্যাম্পু করার সময় আমরা না জেনে অনেক ভুল করে ফেলি। আর তাতে অনেকটা চুলের বারোটা বেজে যায়। তখন ভাবি, চুল বাড়ছে না কেন? এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, শ্যাম্পু করার সময় কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
- শ্যাম্পু করুন ক্যাল্পে।
- খুব বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।
- শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
- শ্যাম্পু করার আগে চুল আঁচড়ান।
- ভেজা চুল টেনে আঁচড়াবেন না।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় কি?
অতিরিক্ত টেনশন, পুষ্টির অভাব ও প্রতিদিন ঘুমের ঘাটতি থাকলে চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক। চুল পড়া বন্ধ করতে নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুম যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি সুষম খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চাও জরুরি। এছাড়াও –
- রাতে ঘুমানোর আগে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত নারকেল তেল মালিশ করুন। সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে শ্যাম্পু করার ১ ঘণ্টা আগে চুলে লাগান। এটি মাথার ত্বকের চুলকানি উপশম করবে।
- ডিমের কুসুমের সঙ্গে সামান্য অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি চুল পড়া বন্ধ করবে এবং দ্রুত বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে।
- 20 মিনিট পর অলিভ অয়েল দিয়ে চুলে ম্যাসাজ করুন এবং হালকা গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করুন।
- পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এর পর শ্যাম্পু করুন।
ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় কি?
- চুলের গোড়া পরিষ্কার রাখুন
- আপনার চুলে অতিরিক্ত তেল দেওয়া এড়িয়ে চলুন
- বেশিক্ষণ চুল ভিজিয়ে রাখবেন না
- সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকুন
- স্বাস্থ্যকর ডায়েট করুন
- মানসিক চাপ কমাতে
- ধুমপান, মদ্যপান বন্ধ কর
>আরও পড়ুন- খুশকি দূর করার উপায়। চিকিৎসা, ঔষধ-শ্যাম্পু