জন্ডিস হলে করনীয় কি এবং চিকিৎসা
আজকের আর্টিকেল হচ্ছে জন্ডিস হলে করনীয় কি এবং চিকিৎসা। জন্ডিস কোন রোগ নয় বরং এটি রোগের লক্ষণ জন্ডিস নানা কারণে হতে পারে জন্ডিস বলতে সাধারণত লিভারের প্রদাহজনিত জন্ডিসকে বোঝানো হয়। ওষুধ অ্যালকোহল ভাইরাস থেকে শুরু করে ইত্যাদি কারণে লিভারের প্রদাহ হতে পারে। আমাদের দেশের লিভার প্রদাহের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই, হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। তার মধ্যে প্রথম দুটি পানীয় খাদ্যবাহিত আর তৃতীয় ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে।
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ। তবে যেকোনো বয়সের মানুষ হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে।আমারা প্রসাবের রং, চোখ ও ত্বক হলদে রংয়ের দেখা দিলে জন্ডিস হয়েছে বলে ধারণা করা হয় অনেক কারণে জন্ডিস হতে পারে ।তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জন্ডিসের কারণ মাত্রা জটিলতা ইত্যাদি জেনে নেওয়া উচিত।
জন্ডিস হওয়ার কারণ
জন্ডিস হওয়ার মূল কারণ হলো রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অধিক পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। বিলুরুবিন হলুদ রঙের এক ধরনের পদার্থ। যা রক্তে উপস্থিতি লাল রক্ত কণিকার 120 দিনের চক্র পূরণ হলে ভেঙ্গে তৈরি। বিলিরুবিনের বিলি থাকে যেটা লিভারের তৈরি পাচক তরল পদার্থ এবং এটা গলব্লাডারে থাকে।
এটা খাবার খেয়ে হজম করতে আমল তৈরি করতে সাহায্য করে। যদি কোনো কারণে বিলিরুবিন বিলের সাথে মিলিত হতে না পারে। অথবা যখন লাল রক্ত কণিকার সামান্য থেকে কম পরিমাণ বাড়তে শুরু করে তখন রক্তে বিলিরুবিনের স্তর দ্রুত বাড়তে থাকে। আর এইভাবে এটা শরীরের অন্য অঙ্গ পৌঁছালে হলুদ ভাব সৃষ্টি করে।
- শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে জন্ডিস হতে পারে
- অধিক পরিমাণ মদ খাওয়া জন্ডিস হওয়ার একটি অন্যতম কারণ
- ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে জন্ডিস হতে পারে।
- মসলাদার খাবার খেলে জন্ডিস হতে পারে।
- এছাড়া দূষিত পানি ব্যবহার করলে জন্ডিস হতে পারে
জন্ডিসের লক্ষণ
জন্ডিসের কারণে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া। জন্ডিসের নাম শুনে বুঝা যায় এটি একটি হলুদ রোগ। জন্ডিসের অনেক লক্ষণ আছে যেগুলো দেখে বুঝা যাবে আপনার জন্ডিস হয়েছে কিনা তা হল:
- চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
- ওকে রং হালকা হলুদ হয়ে যাওয়া
- কমাগত ওজন কমতে থাকা
- সন্ধ্যার সময় ক্লান্তি অনুভব করা
- পায়ে ব্যথা হওয়া
- শরীরে চুলকানি হওয়া
- ডাঁন দিকের পাঁজরের নিচের অংশ বাড়ি মনে হওয়া এবং ব্যথা অনুভব করা
- পেটে ব্যাথা হওয়া
>আরও পড়ুন- জন্ডিস হলে কি করে বুঝবেন এবং কী খাবেন
জন্ডিস হলে করনীয় কি এবং চিকিৎসা
আঁখের রস: আখের রস জন্ডিসের জন্য অনেক উপকারী দিনে কয়েকবার এটি পান করা উচিত। আখের রস পান করলে জন্ডিস খুব দ্রুত সেরে যায়।
ঘোল: আপনার জন্ডিস হলে প্রতিদিন এক গ্লাস ঘোল খাওয়া প্রয়োজন। তবে এতে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে এর গুনাগুন আরও বেড়ে যায়। এটি কিছুদিনের মধ্যেই জন্ডিসকে পুরোপুরি শেষ করে দেয়।
ফল: ফলের মধ্যে সানতারা তরমুজ এবং খারবুজা তিনটি জন্ডিস দূরীকরণে খুব উপকারী। এটি বেশি পরিমান খাওয়া প্রয়োজন। এতে করে জন্ডিস এতে করে খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
লেবুর রস: লিভার কোষের সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য দিকে ছাড়বে লেবুর রস জলে মিশিয়ে পান করলে কিছুদিনের মধ্যে আপনি জন্ডিস থেকে সুরক্ষা পেতে পারেন।
টমেটোর রস: টমেটোর রস জন্ডিসের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান। টমেটো রসের সাথে গোলমরিচ ও লবণ মিশিয়ে পান করুন।
পিঁয়াজ: পিঁয়াজ জন্ডিসের জন্য অনেক লাভবান। প্রথমে পিঁয়াজ কেটে নিয়ে লেবুর রস দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। কয়েক ঘন্টা পর পিঁয়াজে বাইরে বার করে নিন। এতে লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে রোগীকে খাওয়াবেন। দিনে দুই বার এই পিঁয়াজ খেলে খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
মূলাপাতা: মূলাপাতা জন্ডিসের জন্য খুব উপকারী। পাতাগুলি বেটে তার থেকে রস বের করে সেটাকে খেলে খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। এবং পেট পরিষ্কারের করবে এবং খিদে বাড়াবে। জন্য ছুটি পাবে এতে করে আপনি জন্ডিস থেকে রেহাই পাবেন।
পুদিনা পাতা: লিভার ফাংশন এর জন্য পুদিনা পাতা খুবই উপকারী। পুদিনা পাতার প্রতিদিন সকাল চার-পাঁচটি খেলে জন্ডিস জন্য ভালো উপকার পাওয়া যায় এছাড়া পুদিনার জুস খেলে আরো ভালো উপকার হয়।
আনারস: জন্ডিসের জন্য আখের রস যেমন ভালো তেমনি আনারস ও 12 একই ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া লিভার পরিশোধনের আনারস খুবই উপকারী।
বিশেষ সাবধানতা গ্রহণ করুন: প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে প্রতিদিন অন্তত 8 গ্লাস পানি পান করা উচিত। এতে করে পানি শরীরের থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে। স্বাস্থ্যের উন্নতি করার জন্য থেকে এক থেকে দুই কিলোমিটার প্রতিদিন হাঁটুন কিছুক্ষণ রোদে বসে থাকুন।
ভোজনের সময় সে খাবার গ্রহণ করুন যেগুলোর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি এর উপাদান বর্তমানে আছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা করা যাবে না। প্রতিদিন ব্যায়াম করুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।
যেসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে: চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা যেমন তেল, ঘি ও মাখন কমপক্ষে 15 দিন পর্যন্ত খাবেন না। কিছুদিন পর মাখন বা জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারেন। ডাল খাবেন না।
হজমে সাহায্যকারী খাবার: জন্ডিস হলে খাবার হজম মধ্যে খুব সমস্যা হয় তাই যেসব খাবার দ্রুত হজম হয় সেইরকম খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন। যেমন কমলালেবু আনারস মধু পেঁপে পাকা ইত্যাদি খেতে পারেন।
ভুল চিকিৎসায় থেকে দূরে থাকুন: যেহেতু কোনো রোগ নয় তাই নির্দিষ্ট কোন প্রয়োজন নেই। এক সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এই সময়টা খুব বেশি প্রয়োজন বিশ্রাম নেওয়া। বলা যেতে পারে বিশ্রাম এই রোগের চিকিৎসা।
ব্যথার ওষুধ বা ঘুমের ওষুধ সহ অন্য কোনো প্রয়োজনই কবিরাজের ওষুধ খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। এক কথায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। এতে করে আপনার বিপরীতে ঝুকির সম্ভাবনা আছে।
>আরও জানুন- হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার
জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত?
জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক বা চোখের সাদা অংশে ও মিউকাস ঝিলি হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব 1.2 mg/dL মিলি নীচে থাকে (25 µmol/L এর নিচে) 3mg/dL এর নিচে 50 µmol/L এর বেশি হলে জন্ডিস হয়।
জন্ডিস হলে কি ক্ষতি হয়?
আরও জানুন- কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়
জন্ডিস কি বাহিত রোগ?
শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে আমরা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। বিলিরুবিন এমন একটি পদার্থ যা আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক ব্যবস্থা প্রভাব ফেলে ক্ষতিগ্রস্থ করে। শুধু তাই নয় আমাদের চোখ এবং ত্বকের স্বাভাবিক রঙ হারিয়ে ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যায়। যে কোন ব্যক্তি যে কোন সময় জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে।
বিলিরুবিন কি
বিলিরুবিন হচ্ছে একধরনে হলুদ রঙের পদার্থের উপস্থিতির লাল রক্ত কনিকার 120 দিনের মধ্যে চক্র পূরণ হলে ভেঙ্গে তৈরি হয়। বিলিরুবিনে বিলি থাকে যেটা লিভার তৈরি পাচক তরল পদার্থ এবং এটি গলব্লাডারে থাকে। এটি খাবারকে হজম করতে ও মল তৈরি করতে সাহায্য করে।