কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার করার সম্পূর্ণ উপায়
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার মানবদেহে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি যার মাধ্যমে শরীরের সমস্ত বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয় মূত্রের মাধ্যমে। পৃথিবীতে যত পৃথিবীতে যত প্রাণঘাতী দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে তার মধ্যে একটি হলো কিডনি রোগ। একটি মানব দেহের খুব ধীরে ধীরে ক্ষতি সাধন করে। এই জন্য এই রোগকে বলা হয় নীরব ঘাতক রোগ। খুব গুরুতর অবস্থা না হলেও লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়া যায় না।
কিডনি রোগ কেন হয়
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,নেফ্রাইটিস, ইউরিন ইনফেকশন কিডনি পাথর সহ বিভিন্ন কারণে কিডনি রোগ হয় নিয়মিত বেশি পরিশ্রম করা অতিরিক্ত বিশ্রাম এবং ব্যায়াম না করা । প্রয়োজনীয় পানি পান না করা এবং ধূমপান করা এসব কারণে কিডনি রোগ হতে পারে অনেক সময় পরিবারের কারও কাছ থেকে এই রোগ সংক্রমিত হয়।
কিডনি রোগের লক্ষণ
- সব সময় ক্লান্তি অনুভব করা
- অমনোযোগী হওয়া
- হাত পা ফুলে যাওয়া
- ঠান্ডা লেগে থাকা
- কম বয়সে উচ্চরক্তচাপ
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- সকালে ঘুম থেকে উঠার পর চোখ ফুলে যাওয়া
- শরীর দুর্বল, বমি বমি ভাব ক্ষুধামন্দ্য
- শরীরের চুলকানি
- নিদ্রাহীনতা
- প্রস্রাবের পরিবর্তন প্রস্রাব কম বা বেশি হওয়া।
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা জালা করা
- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বা পুঁজ যাওয়া।
- সবসময় ঠান্ডা লাগা
- ফোলাভাব
- ত্বকের সমস্যা ও রং পরিবর্তন
- উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে
- কোমরের দুই পাশে যদি ব্যথা হয়। এই ব্যথা তলপেটে হতে পারে। এডাল
যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি
- যাদের ডায়াবেটিস আছে।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে ।
- অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যাথানাশক ওষুধ সেবন করে থাকে।
- যাদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা জনিত পানিশূন্যতা থাকে।
- যাদের পরিবারগত বা বংশগতভাবে কিডনি রোগ আছে।
- যাদের বার বার গলায় চামরাই প্রসাবের সংক্রমণ হয়।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার |
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে যা সময়ের সাথে উন্নতি সাধন হয় না এটি স্বাভাবিক উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়। উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের জন্য অনেক ভয়ংকর। কারণ এটি ক্ষুদ্র রক্তনালী উপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে অতিরিক্ত চাপের কারণে কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। তারমধ্যে ডায়াবেটিস হলে কিডনি রোগের প্রধান কারণ। ডায়াবেটিস রক্তে উচ্চ শর্করার কারণে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত শর্করার কারণে রক্ত নালীতে ক্ষতি হতে থাকে।
যেসব খাবার এড়িয়ে যাবেন
যেসব খাবারে অতিরিক্ত ভিটামিন সি রয়েছে সেগুলো থেকে বিরত থাকা অথবা পরিমাণ মতো খাওয়া। যেমন খুব বেশি কামরাঙ্গা খেলে এক গ্লাস কামরাঙ্গা জ্যুস খেলে একটি সুস্থ কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে ।কামরাঙ্গা চাষ কিছু দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার ফলে অনেক ক্ষতি রয়েছে। কারণ এইসব খাবারে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। তবে এসব ফল আকারে ছোট আর অনেকের কাছে এই ফলটি বিস্বাদ মনে হয় যার ফলে এটি খাওয়ার প্রবণতা অনেক কম। তাছাড়া নিয়মিতই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি খাওয়া সাপ্লিমেন্ট কিডনির ক্ষতি করে।
প্রস্রাবের পরিবর্তন
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া অথবা প্রস্তাব কমে যাওয়া দুইটি কিডনির রোগের লক্ষণ। শরীর থেকে পানি বের করা ছাড়াও পানি শুষে নেওয়ার কাজ করেছে কিডনি। আর সেটি করতে না পারলেই বেশি ঘনঘন প্রসাব হয়। প্রস্রাবের রং লালছে হলে প্রস্রাবের ফেনা ভাব হলে অনেক খারাপ হলে। কিডনি পাথর, টিউমার, ক্যান্সারের রক্ত বের হতে পারে। কিডনির সমস্যা হলে শরীর থেকে প্রোটিন বের হয়ে যায় যার ফলে প্রস্রাবে ফেনা ভাব হয়।
কিডনি রোগের প্রতিকার
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার করবেন কিভাবে যাদের কিডনির সমস্যা আছে এবং যারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের কিডনি রোগ মুক্তির জন্য কয়েকটি উপায়সমূহ রয়েছে।
যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, নেফ্রাইটিস আছে তাদের কিডনি রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমাদের বাংলাদেশের প্রায় শতকরা 80 ভাগ কিডনি এই তিনটি কারণে নষ্ট হয়ে যায়। ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ নেফ্রাইটিস এই ৩টা রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে শতকরা 80 ভাগ কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তাছাড়া যাদের কিডনি ঘনঘন ইনফেকশন হয়ে যায় তাদের পাথরজনিত রোগ আছে বা যাদের কিডনিতে বাধাজনিত রোগ আছে তাদের খুব সহজে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। একটু সতর্ক হলেই কিডনি ফেইলর থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার করার জন্য প্রতিনিয়ত কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
(ক) সাবধানতা অবলম্বন করলে কিডনি সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
(খ) দুইটি অসুখ কিডনির বড় শত্রু বলা হয় একটি হল ডায়াবেটিস এবং অন্যটি উচ্চ রক্তচাপ এই দুইটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব প্রয়োজন।
(গ) বেশিদিন ধরে ইউরিন ইনফেকশন কিডনি পাথর প্রস্টেটের সম্যাসা কিডনির ক্ষতি করে। এই রোগগুলা পুষে রাখা যাবে না।
(ঘ) পরিমিত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে খুবই কম বা অতিরিক্ত পানি কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
(ঙ) ব্যথানাশক ওষুধ কে বলা হয় বিষ। তাই ইচ্ছে মত ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
(চ) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
(ছ) যাদের রক্তে প্রচুর পরিমাণ কোলেস্টেরলের রয়েছে। অন্যান্য ট্রাইগ্লিসারাইড,এলডিএল বেশি থাকে সেক্ষেত্রে এগুলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্যেভাস পরিবর্তন বিকল্প কোন পথ নেই।
(জ) কিডনি ভালো রাখার একটি সঠিক উপায় হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম করা নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়বেটিস যেমন নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় তেমনি কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
(ঝ) অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
(হ) ধূমপান পরিহার করতে হবে যেমন ধূমপান একদিকে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় তেমনি ভাবে কিডনির সমস্যা করে।
কিডনি রোগের চিকিৎসা
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার করার জন্য কি কি চিকিৎসা প্রয়োজন জেনে নিন
- নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা
- প্রচুর পরিমাণ সুষম খাবার খাওয়া। কিডনি রোগের কারণে অনেক সময় ডাক্তার বিভিন্ন খাবারের বিধি নিষেধ দেন সেগুলো মেনে চলা।
- রাতে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুমানো
- শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা অনেক জটিল কিডনি সমস্যা না হলে সপ্তাহে 5 দিন অন্তত 30 মিনিট করে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন।
- ব্যথার ওষুধ সেবন করার সময় সর্তকতা অবলম্বন করুন।
- খুব জটিল কিডনি রোগের জন্য ডায়ালাইসিস করতে হয়।
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চার্জারি লাগাতে পারেন।
আরোও জানুন:
কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য, প্রয়োজন সচেতনতা
কিডনির অসুখ: খালি চোখে বোঝার কোন উপায় আছে?
Dhruba Tech News