কিডনি ভালো রাখার উপায়
কিডনি মানবদেহের ৫টি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গের একটি। মানুষের শরীরে দুটি কিডনি আছে। কিডনি শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং বিভিন্ন ধরনের দূষিত পদার্থ ও বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দেয়। তাই কিডনি নষ্ট হলে বা ঠিকমতো কাজ না করলে নানা সমস্যা হতে পারে। যেকোনো কিডনি রোগই নীরব ঘাতক। এ ধরনের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নিতে হবে। এবং কিডনি ভালো রাখার উপায় জেনে রাখুন।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
কিডনি সুস্থ রাখার শত শত উপায় রয়েছে। তবে আমরা কিছু উপায় অনুসরণ করতে পারি। তাদের সবাইকে একসাথে মেনে চলা সম্ভব না। তাই গবেষক ও চিকিৎসকরা কিছু সাধারণ বিষয় উল্লেখ করেছেন বা সংরক্ষণ করেছেন, যা মেনে চললে আমরা আমাদের কিডনিকে ক্ষতি বা রোগ থেকে বাঁচাতে পারি। কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলো হল:
- পর্যাপ্ত জল পান করা: কিডনি সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান কিডনিতে পাথর ও স্বাভাবিক কাজকর্ম প্রতিরোধ করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- মাদক ত্যাগ করুন: ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমাতে পারে। ফলে এর কর্মক্ষমতা কমে যায়।
- প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করবেন না: মানবদেহের প্রতিদিন 500 মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি প্রয়োজন হয় না। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। তাই প্রতিদিন 500 মিলিগ্রাম বা তার কম ভিটামিন সি খান।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: শরীরের অতিরিক্ত ওজন কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
- কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন: কোমল পানীয় বা বিভিন্ন এনার্জি ড্রিংক কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করুন।
- রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুন: রক্তচাপ 140/90 এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিডনি সুস্থ রাখতে রক্তচাপ সবসময় 130/80 বা তার কম রাখতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং লবণ কম খাওয়া জরুরি।
- অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন: খাবারে অতিরিক্ত লবণ যোগ করা বা খাবারের সঙ্গে আলাদা লবণ খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
- ওষুধের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন: কমবেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। নিয়ম না জেনে বা নিজে ওষুধ না কিনে অজান্তেই কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়। আসুন কিডনি নিয়ে চিন্তা না করে, সুস্থ থাকি।
- অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া এড়িয়ে চলুন: গরুর মাংস বা অন্যান্য প্রাণীর মাংস খাওয়া কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এমনকি চিপস, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডুলস এবং লবণযুক্ত বাদাম কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। খাদ্যে অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং কিডনির দুর্বল কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে চলুন এবং খাদ্য তালিকায় ডালের প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করুন। মাছও খাওয়া যায়।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম: সুস্থ থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
>আরও পড়ুন- > কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার করার সম্পূর্ণ উপায়
কিভাবে বুঝবেন কিডনি নষ্ট হয়েছে কি না
বায়োপসি ছাড়াই প্রস্রাবের আরএমই পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির স্বাস্থ্য জানা যাবে। এ ছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পারেন। এসব পরীক্ষা স্বাভাবিক হলে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে বুঝতে হবে কিডনি ঠিক আছে।
- কিডনি নষ্ট হয়েছে কি না তা বোঝার জন্য নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। চাপ পরিমাপ করুন।
- পা ফুলেছে কি না খেয়াল করুন।
- এক্ষেত্রে প্রস্রাবে কোনো সমস্যা বা জ্বালাপোড়া হচ্ছে কি না বা প্রস্রাব কম হচ্ছে কি না তা দেখে নিন।
- এ ছাড়া খাবারের প্রতি অরুচি, বমি বমি ভাব, বারবার বমি হতে পারে।
- ওজন হ্রাস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনের চাহিদা কমে যাওয়াও কিডনি রোগের অগ্রগতির লক্ষণ।
কিডনি রোগের লক্ষণ
কিডনি রোগের একটি প্রধান লক্ষণ হল প্রস্রাবের পরিবর্তন। কিডনির সমস্যা থাকলে প্রস্রাব কম-বেশি হয়। বিশেষ করে রাতে এই সমস্যা বাড়ে। প্রস্রাবের রং গাঢ়। অনেক সময় প্রস্রাব করার তাড়না অনুভূত হলেও প্রস্রাব বের হয় না।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা: প্রস্রাবের সময় ব্যথা কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া- এগুলো মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ। এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে জ্বর ও পিঠে ব্যথা হয়।
ছোট ছোট শ্বাস- কিডনি রোগের কারণে ফুসফুসে তরল জমা হয়। এ ছাড়া কিডনি রোগেও শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এগুলোর কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তাই অনেকেই ছোট করে শ্বাস নেন।
শরীরে ফুলে যাওয়া- কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। কিডনির রোগ হলে এই অতিরিক্ত পানি বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত পানি শরীরে ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
মনোনিবেশ করতে অসুবিধা: লোহিত রক্ত কণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। এতে কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া- প্রস্রাবে রক্ত থাকলে তা খুবই বিপজ্জনক। এই ক্ষেত্রে, অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
সবসময় ঠান্ডা বোধ- কিডনি রোগের ক্ষেত্রে, গরম আবহাওয়াতেও ঠান্ডা অনুভূত হয়। আর কিডনিতে আক্রান্ত হলে জ্বরও হতে পারে।
বমি বমি ভাব- রক্তে বর্জ্য পদার্থ বৃদ্ধির কারণে কিডনি রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
ত্বকে ফুসকুড়ি- যখন কিডনি ব্যর্থ হয়, তখন বর্জ্য পদার্থ রক্তে জমা হয়। এটি ত্বকে চুলকানি এবং ফুসকুড়ি হতে পারে।
পিছনে ব্যথা: কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়। পিঠের পাশে ব্যথা আছে। এটিও কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ।
কিডনি পরীক্ষা করুন
কিডনি ভালো রাখার উপায় হলো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করে ভালো ফল পেতে পারেন। এই রোগীদের কিডনির সমস্যা দেখা দিলে, তাদের অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত এবং কিডনি পরীক্ষা বন্ধ করা উচিত। অন্যথায় বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিডনি ওভারলোড হলেই এটি স্পষ্ট হয়। কিন্তু যদি নিয়মিত বা বছরে অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষা করা হয়, তাহলে কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগেই চিকিৎসা করে সুস্থ করা যায়। তাই বছরে ২ বার না হলেও অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষা করা উচিত।
>আরও পড়ুন- কিডনি রোগের ঔষধ কি কি লাগে