মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ

মানসিক রোগ এক প্রকার মেন্টাল ডিসঅর্ডার বা মানসিক ব্যাধি। মস্তিষ্কে রোগের কারণে দীর্ঘদিন কোনো মানুষ আচার-আচরণ জীবনযাপন ও অস্বাভাবিক মানসিক রোগ বা মনোরোগ যা সরাসরি মস্তিষ্কের বিশেষ অঞ্চল বা ফাংশনগুলো সাথে জড়িত। জিনগত বা ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কার্যকলাপে মস্তিষ্কে যখন তার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে আর তখন মানসিক রোগের উৎপত্তি হয়।

মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ

যার জন্য তার স্বাভাবিক পারিবারিক সামাজিক পেশাগত জীবন ব্যাহত হয় অথবা রোগী তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় বা অস্বস্তিতে ভুগে থাকেন। তাই আজকে আমার আপনাদের সাথে শেয়ার করব মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ মানসিক রোগের কারণ কি, মানসিক রোগের প্রকারভেদ ও চিকিৎসা।

মানসিক রোগ কি

মানসিক রোগ হচ্ছে যে মনের রোগ। মনের রোগ বলতে কি বুঝায়  ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কার্য ক্ষমতা অস্বাভাবিক আচরণ মস্তিস্কে চিন্তা ধারা বা অনুধাবন করার প্রক্রিয়া ব্যাহত করে । মানুষ নিজের চালিকাশক্তি মানুষের বিবেক-বুদ্ধি  ইচ্ছা-অনিচ্ছা কল্পনার মনের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মানসিক যন্ত্রনায় ভোগে। মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির এমন স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে অক্ষম হয়। কথাবার্তা তার কথাবার্তা চলে ওগুলোকে সবকিছুতে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ

দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কাজকর্মে অনীহা দাঁত মাজা বা গোসল করা ইত্যাদি ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিরক্তি ও অলসতা বোধ করা।

  • নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেওয়া
  • দীর্ঘ সময় ধরে মন খারাপ কোন কিছুতে আনন্দ খুঁজে না পাওয়া।
  • গায়েবী আওয়াজ শুনতে পারা
  • সবাইকে সন্দেহ নজরে দেখা এমনকি পরিবারের মানুষদের অবিশ্বাস বা সন্দেহ করা।
  • সবকিছুতে নিজেকে দায়ী করার প্রবণতা
  • রুক্ষ মেজাজ অল্প কিছু হলে রেগে যাওয়া বদ মেজাজ দেখানো ইত্যাদি
  • মানুষকে অতিরিক্ত অবিশ্বাস করা বা বিশ্বাস করা।
  • একা একা কথা বলা বা বির বির করে অযথা হাসা।
  • মানুষকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া। অন্য কাউকে হত্যা করার চেষ্টা করা। মানসিক রোগ আক্রান্ত সন্তান তার মা-বাবাকে ও মেরে ফেলতে পারে এমনকি নিজেকেও আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন।
  • সারাক্ষণ ভয়-ভীতি মধ্যে থাকা
  • উগ্র আচরণ অধিক চঞ্চলতা যেমন মারপিট করা ভাঙচুর করার 3 থেকে 5 শতাংশ রোগী এমন আক্রমনাত্মক স্বভাবের হয়ে থাকে।

মানসিক রোগের কারণ

মানসিক রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া দুরূহ। এর কারণ অধিকাংশ সময় অনির্দিষ্ট । সাধারণভাবে মানসিক রোগের তিনটি বিষয়কে দায়ী করা হয়।

জেনেটার বংশগত কারণ: গর্ভবতী মায়েদের উপর চাপ সৃষ্টি হলে বা দুশ্চিন্তা কাঠানলে অনাগত সন্তানের জন্ম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক রোগ হয়ে থাকে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো মানসিক রোগ থেকে থাকলে এই রোগ হতে পারে।

মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন: মানুষের ব্রেইনে কিছু অনিয়মিত ক্যামিকেল থাকতে পারে যা চিন্তা ও আচরণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ রোগের আক্রান্ত ব্যক্তিদের গবেষণা করে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ব্রেইনের কিছু অস্বাভাবিক গঠন লক্ষ করা যায়। ব্রেইনের ইমেজিং এবং ডেমোগ্রাফি পরীক্ষা করে রাসায়নিক পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর উপর ভিত্তি করে এসব মানসিক রোগের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

সামাজিক ও পারিপার্শিক কারণ: বৈষম্য দারিদ্র কর্মসংস্থানের অভাব, মাদকাসক্ত বা খারাপ আচরণ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিচ্ছেদে, কঠোর শৃঙ্খলায় শিশু লালন পালন করলে, ব্যবসায় লস বা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি ইত্যাদি

মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ


মানসিক রোগের প্রকারভেদ

মানসিক রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যেমন-

নিউরোটিক: নিউরোটিক রোগীদের মধ্যে আছে ডিপ্রেশন, হতাশা বিষন্নতা, অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগজনক রোগ অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার বা শুচিবািই, অনিদ্রা প্যানিক ডিজঅর্ডার ও অস্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি।

সাইকোটিক: সাধারণত সাইকোটিক রোগীদের ডাক্তার দেখান  এবং নিজেরাই ওষুধ খান। কিন্তু সাইকোটিক রোগীর মনে করেন তিনি সুস্থ আছেন কিন্তু আশেপাশের মানুষগুলো তাকে ভুল ভাবছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বোঝানো মুশকিল হয়ে পড়ে হয়ে পড়ে।

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় যে বিষয়টি জানা জরুরি যদি চিকিৎসা না করে থাকেন তাহলে উদ্বেগ এবং বিষন্নতা মস্তিষ্কের ক্ষতি করে মানসিক ভাঙ্গন দেখা দিবেন নার্ভাস ব্রেকডাউন কখনো কখনো মানুষ একই চাপের কারণ হয়ে থাকে যেখানে তারা সাময়িকভাবে দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতো অক্ষম। এটি সাধারণত তখনই ঘটতে পারে যখন জীবনের চাহিদাগুলো শারীরিক এবং মানসিক অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।

মনকে সবসময় বিষণ্নতা দেখা যায়। বিষন্নতার কারণ হিসেবে গবেষণায় দেখা গেছে কিছু রাসায়নিক পদার্থ খুব বেশি বা কম থাকার কারণে বিষন্নতা হয় না বরং হতাশার বহু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের  খুবই ত্রটিপুর্ণ মেজাজ নিয়ন্ত্রণ, জেনেটিক দুর্বলতা এবং চাপপূর্ণ জীবনের ঘটনা। দৈনিন্দিন ছাপের ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে চিন্তা করে অনুভব করি বা কাজ করি। তা  পরিচালনা করা কঠিন মনে করা দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ।

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা

আমরা অনেকে কর্মজীবন ব্যস্ততা মোবাইল আসক্ত বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত  ঘুম যেতে পারি না। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে  আমারা শারীরিক মানসিক ভাবে অসুস্থ  হয়ে পড়ি। সঠিক সময়ে দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। কারণ পর্যাপ্ত ঘুম  শারীরিক মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

নিয়মিত গোসল করা নিজের কাপড়চোপড় ধোয়া নিজে নিজের রুম পরিস্কার করা বাড়ির কাজ অন্যকে সাহায্য করা যা আপনার একটি দিনকে আর অর্থপূর্ণ করতে সাহায্য করবে। অল্প সময়ের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা।  ফলমূলসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে। সময় নিজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। পৃথিবীর সকল প্রাণ-প্রকৃতির বন্ধু মনে করা। তাহলে আপনি ভালো থাকতে পারবেন।

>আরও পড়ুন- কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়

মানসিক রোগের চিকিৎসা

  • আমরা সবাই জানি মানুষের আচার-আচরণ বা কোন কাজ সম্পাদিত হওয়ার আগে মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক পদার্থ যেমন নিউরোট্রান্সমিটার মানসিক প্রক্রিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • যাদের মানসিক রোগ হয় তাঁদের নিউরোট্রান্সমিটারে ঘাটতি বা বাড়তিজনিত পরিবর্তন দেখা যায়। আর এই জায়গাতে ওষুধে কাজ করে। ওষুধ নিউরোট্রান্সমিটার ভারসাম্য রক্ষা করে মানসিক রোগকে নিরাময় এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মাইলফলক বলা হয় জিন থেরাপি। একটি মানসিক রোগের চিকিৎসা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ জিন বংশগতির বাহক যাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
  • মানসিক রোগ হওয়ার জন্য মস্তিষ্কের পাশাপাশি সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক উপাদানের ভূমিকা অনেক বেশি। কারণে চিকিৎসার সাইকোথেরাপি কাউন্সেলিং এর গুরুত্ব কম নয়।
  • সাইকোথেরাপি বা কাউন্সিলিং রোগের জ্ঞানের বিকাশ আচার-আচরণের গড়নের উপর কাজ করে। তাকে যৌক্তিক আচরণ করতো করে উদ্বুদ্ধ করে এর সাথে সামাজিক সহায়তা দেয় বাড়তি নিরাপত্তা ও সমাজে টিকে থাকার সাহস জোগায়।
  • ইয়োগা, মেডিটেশন নিয়মিত এক্সারসাইজ করা পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ রোগীদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • কিছু কিছু মানসিক রোগ আছে তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। তখন তাদের মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসা উচিত। চিকিৎসা করার পূর্বে সাইক্রেটিস্ট বা ক্লিনিক্যাল সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেওয়া ভালো।

মানসিক রোগের ঔষধ

মানসিকভাবে আপনার কোন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ দেবেন ডাক্তার আপনাকে ভালো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে  ওষুধ অথবা অন্য ব্যবস্থাপনা নেবেন। মানসিক রোগীদের বিভিন্ন ঔষধ বাজারে পাওয়া যায় যেমন EsSCILES 10 MG, TRAZAPIN 7.5 MG, DISOPEN 5 MG, INDEVER 40 MG ওষুধগুলো অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করবেন এই ওষুধগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসকের নিয়মমাফিক অনুযায়ী খেতে হবে। আরো আরো অনেক ওষুধ আছে। আরো অনেক ওষুধ আছে আপনি চাইলে খেতে পারবেনা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া।

মানসিক রোগের চিকিৎসা থেরাপি 

নতুন বিশ্বের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশে মানসিক চিকিৎসার জন্য নানা থেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে। মানসিক রোগীদের চিকিৎসা যেসব থেরাপি দেওয়া হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সাইকোথেরাপি বা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি তাছাড়া রয়েছে ফ্যামেলি থেরাপি।কোন ধরনের থেরাপি আপনার জন্য উপযোগী তা ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলতে পারবেন। উপরোক্ত উপরু লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে দেখতে পেলে একজন সাইক্রেটিস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ

মানসিক রোগীদের প্রতি আমাদের করণীয়

  • মানসিক রোগীদের আমরা পাগল বদ্ধ উম্মাদ প্রভৃতি অসম্মানজনক কথা বলে থাকি এগুলা পরিহার করতে হবে।
  • তাদের সামাজিক ও পরিবার থেকে বর্জন করা।
  • পরিবারের আপনজনকে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তাদের দূরে সরিয়ে দিবেন না। থেকে তাকে মানসিকভাবে শক্ত করার চেষ্টা করুন।
  • তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অন্য রোগের মত আরেকটি রোগ টি। ওষুধ দীর্ঘমেয়াদী হলে চালিয়ে যেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎকরে ওষুধ বন্ধ করে করা যাবে না।

>আরও পড়ুন- মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় ও প্রতিকার

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url