পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য

পাথরকুচি একটি ঔষধি গাছ যা প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, পাথরকুচি পাতা কিডনি, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে বিশেষ উপকারী। পাথরগুলো দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু। পাতা মাংসল ও মসৃণ, আকৃতিতে ডিমের মতো। এর চারপাশে ছোট ছোট গোলাকার খাঁজ রয়েছে। এই খাঁজ থেকে নতুন চারা জন্মে। অনেক সময় গাছ পুরনো হলে গাছের খাঁজ থেকে চারা গজায়। পাতা মাটিতে রেখে সহজেই চারা পাওয়া যায়।

ঘাস নুড়িযুক্ত মাটিতে সহজেই বৃদ্ধি পায়, তবে ভিজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দেখতে অনেকটা ল্যাম্পশেডের মতো। ভিতরে ফাঁপা ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হয়। ফুলের বাইরের দিকে সবুজাভ লাল ও সাদা দাগ থাকে। শীতকালে ফুল এবং গ্রীষ্মকালে ফল।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

স্টোনক্রপের মেহ, ঠান্ডা, প্রস্রাব ধারণ, পিত্তথলি, পেট ফাঁপা, শিশুদের কোলিক, মৃগী রোগে ঔষধি গুণ রয়েছে। আসুন জেনে নিই পাথরকুচি পাতার আরও কিছু গুণাগুণ।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: আমরা তো জানি পাথরকুচি পাতার গুনাগুন। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতার তুলনা হয় না। চিরতরে মুক্তি দিতে পারে এই পাথরকুচি পাতা মুত্রথলি সমস্যা থেকে।

সর্দি নিরাময়: যে সার্দি পুরানো হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে এটি বিশেষ উপযোগী। এই কফ বিকারে পাথর কুচির পাতার রস করে সেটাকে একটু গরম করতে হবে এবং তার সাথে সাথে সোহাগার খৈ মেশাতে হবে। ৩ চা চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রাম আকার হয়। তা থেকে ২ চা চামচ নিয়ে নিয়ে সকাল ও বিকাল ২ বার খেতে হবে। এর দ্বারা পুরানো সর্দি সেরে যাবে এবং সর্বদা কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

রক্তপাত: পাথরকুচি পাতার রস এক চা চামচ করে সকালে দুবার করে দুই দিন খেলে পিত্তজনিত ব্যথার কারণে রক্তক্ষরণ সেরে যায়।

জন্ডিস নিরাময় করে: পাথরকুচি পাতা জন্ডিসের দারুণ ওষুধ। তাজা পাথরকুচি পাতা এবং এর রস লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা করতে খুবই উপকারী।

শরীর জ্বালাপোড়া: দুই চামচ পাথরকুচি পাতার রস আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুবার খেলে শরীরে জ্বালাপোড়া উপশম হয়।

কিডনির পাথর অপসারণ করতে: পাথরকুচি পাতা কিডনি ও পিত্তথলির পাথর অপসারণে সাহায্য করে। দিনে দুবার 2 থেকে 3 টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খান।

ত্বকের যত্নে: পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তার সাথে জ্বালা পোড়া কমনোর ভুমিকা রাখে। যারা ত্বকের ব্যাপারে খুব সচেতন তারা  পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ ও ফুস্কড়ি মতো সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

মেহ: ঠাণ্ডাজনিত কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোঁড়া হলে ব্যথা হয়। যাকে মেহ বলে। সেক্ষেত্রে এক চামচ পাথরকুচি পাতার রস সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

মৃগীরোগ: রোগের সময় পাথর পাতার রস 2-10 ফোঁটা মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলে রোগের উপশম হবে।

পেট ফাঁপা: অনেকের দেখা যায় পেট ফুলে যায়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, আমাশয় হয়, সেরে যায় না, সেক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস এক বা দুই চা চামচ সামান্য চিনি মিশিয়ে আদা কাপ পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এতে প্রস্রাব সরল হবে, অতিরিক্ত বায়ু নিঃসরণ হবে, পেট ফাঁপাও কমে যাবে।

শিশুদের পেটব্যাথা: শিশুর পেটব্যাথা হলে পাথরকুচি পাতার রস ৩০-৬০ ফোঁটা পেটে মালিশ করলে ব্যথা উপশম হয়। কিন্তু পেট ব্যথা নিশ্চিত হতে হবে।

কলেরা, ডায়রিয়া বা রক্ত ​​আমাশয়: কলেরা, ডায়রিয়া বা রক্তাক্ত আমাশয়ের রোগ নিরাময় পাথরকুচি পাতার কোন জুড়ি নেই। 3 মিলি. পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে ৩ গ্রাম জিরা ও ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে এসব রোগে উপকার পাওয়া যায়।

বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালে: বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

পাইলস অর্শ রোগ: পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে লাল মরিচ মিশিয়ে খেলে পাইলস ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার অপকারিতা

উপকারিতার পাশাপাশি পাথরকুচি পাতার বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক পাথরকুচি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে-

  • খুব বেশি পাথরকুচি পাতার রস খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা হয়।
  • খুব বেশি পাথরকুচি পাতার রস খেলে পিত্তথলির সমস্যা হতে পারে।
  • খুব বেশি পাথরকুচি পাতার রস খেলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।
  • খুব বেশি পাথরকুচি পাতার রস খেলে কলেরা বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

পাথরকুচি পাতা খাবার নিয়ম

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে উপরে জেনেছেন এখন জানবেন পাথরকুচি পাতার ব্যবহার। সৌন্দর্যবর্ধনকারী উদ্ভিদ ছাড়াও পাথরকুচি একটি ঔষধি গাছ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পাথরকুচি যুগ যুগ ধরে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু আপনি কি জানেন কি সমস্যা হলে পাথরকুচি পাতা খেতে পারেবেন? বা পাথরকুচি পাতা কীভাবে খাবেন? আসুন জেনে নিই কিভাবে খাবেন পাথরকুচি পাতা।

  • আপনার শরীরের কোনো অংশে জ্বালাপোড়া হলে পাথরকুচি পাতা নিয়ে গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরেবর্তী তা বেটে নিয়মিত খাবেন। এইভাবে আপনি খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
  • সর্দি-কাশিতে পাথরকুচি পাতার রস বেটে তারসাথে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ভালো উপকার পাবেন।
  • আপনি যদি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাহলে দিনে দুবার পাতা চিবিয়ে এর রস পান করা উচিত। তাহলে আপনি খুব ধীরে ধীরে আপনার কিডনির পাথর অপসারণ করতে পারবেন।
  • জন্ডিস প্রতিরোধের জন্য আপনি নিয়মিত পাথরকুচি পাতার বেটে রস করে খেতে পারেন এবং অল্প সময়ে অনেক উপকার পাবেন।
  • আপনি যদি গলগন্ড রোগে ভুগে থাকেন তাহলে এই পাথরকুচি পাতার রস দিনে দুবার খেতে পারেন এতে আপনি অনেক উপকার পাবেন।

উপসংহার

পাথরকুচি আমাদের ভেষজ ওষুধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি বিভিন্ন ধরণের রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আশা করি আজকের আলোচনার মাধ্যমে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি যা আপনার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

আরোও জানুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url